Sunday 27 November 2011

কিয়ামতের আলামত-পর্বঃ১


কিয়ামত কখন হবে?
কিয়ামত কখন হবে তা আল্লাহ ছাড়া কেউ জানেনা। এ বিষয়টি নিয়ে লোকেরা মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) কে কিয়ামতের সময় সম্পর্কে প্রশ্ন করত। তিনি তাদের সংবাদ দিতেন যে আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) ব্যতিত কেউ কিয়ামতের নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে অবগত নয়।আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা)বলেনঃ
“তারা তোমাকে জিজ্ঞাসা করে কিয়ামত কখন ঘটবে।বল,এ বিষয়ের জ্ঞান শুধু আমার প্রতিপালকেরই আছে। শুধু তিনিই যথাকালে উহা প্রকাশ করবেন;উহা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা হবে। হঠাথ উহা তোমাদের উপর আসবে।তুমি এ বিষয়ে সবিশেষ অবহিত মনে করে তারা তোমাকে প্রশ্ন করে। বল এ বিষয়ে জ্ঞান শুধু আল্লাহরই আছে, কিন্তু অধিকাংশ লোক জানেনা।”  (সুরা আ’রাফঃ১৮৭)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম)কে জিবরাঈল(আঃ)যখন প্রশ্ন করলেনঃ কিয়ামত কখন হবে? তিনি উত্তর দিলেন “এ ব্যাপারে যাকে প্রশ্ন করা হয়েছে শে প্রশ্নকারী অপেক্ষা বেশী অবগত নয়।”(সহিহ বুখারী,অধ্যায়ঃকিতাবুল ঈমান)
কিয়ামতের ছোট আলামত
মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম)এর আগমন ও মৃত্যু বরণ
এটি সর্বপ্রথম আলামত। মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমি এবং কিয়ামত একসাথে প্রেরিত হয়েছি।” একথা বলে তিনি শাহাদাতের আঙ্গুল এবং মধ্যমা আঙ্গুলকে একত্রিত করে দেখালেন। (সহিহ মুসলিম,অধ্যায়ঃ কিয়ামতের আলামত)।
মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম)সর্বশেষ নবি। তার পরে আর কোন নবীর আগমন হবেনা। নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম)এর দুনিয়াতে আগমনের অর্থ হল দুনিয়ার বয়স শেষ হয়ে আসছে, কিয়ামত অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে।
চন্দ্র দ্বিখণ্ডিত হওয়া
আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ
“কিয়ামত নিকটবর্তী হয়েছে,আর চন্দ্র বিদীর্ণ হয়েছে।”  (সূরা কামারঃ ১)
হিজরতের পাঁচশত বছর পূর্বে হজ্জের মৌসুমে মিনায় যখন লোকের সামনে সমাগম ছিল তখন রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) এর নিকট মুজিযা চাইলে তিনি আল্লাহর হুকুমে চন্দ্রের দিকে ইশারা করেন। চন্দ্র দুই খণ্ড হয়ে এক খণ্ড পশ্চিমে আর এক খণ্ড পূর্বে যেয়ে স্থির হয়। কিছুক্ষণ পর আবার খণ্ড দুটি মিলিত হয়ে ছন্দ্র আবার পূর্ব আকার ধারণ করে। এটাই শাক্কুল কামার এর মুজিযা। এখানে এ ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত আছে। (বুখারী, মুসলিম)
আনাস(রাজিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ “ মক্কাবাসীরা যখন মহানবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) এর কাছে নবুওয়াত এর প্রমান চাইল তখন তিনি চন্দ্রকে দ্বিখণ্ডিত করে দেখালেন। (মুসলিম, অধ্যায়ঃ সিফাতুল মুনাফিকীন)
বায়তুল মাকদিস(ফিলিস্তীন)বিজয়
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “কিয়ামতের পূর্বে ছয়টি বস্তু গণনা কর। তার মধ্যে বায়তুল মাকদিস বিজয় অন্যতম।”  (বুখারি,অধ্যায়ঃ কিতাবুল জিযইয়াহ)।
উমার ইবনুল খাত্তাব(রাজিয়াল্লাহু আনহু)এর শাসনামলে হিজরী ১৬ সালে বায়তুল মাকদিস বিজয়ের মাধ্যমে নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) এর কথা বাস্তবায়িত হয়েছে।
ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে
এটি অন্যতম আলামত। ফকির মিস্কিন খুজে পাওয়া যাবেনা। সাদকা ও যাকাতের টাকা নিয়ে খোজ করেও নেওয়ার মত কোন লোক পাওয়া যাবেনা। নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মানুষের ধন-সম্পদ বৃদ্ধি পাবে। মানুষ যাকাতের মাল নিয়ে সংকটে পড়বে। যাকাতের মাল মানুষের কাছে পেশ করা হলে বলবেঃ এতে আমার কোন প্রয়োজন নেই।” (মুসলিম, অধ্যায়ঃ কিতাবুল যাকাত)।
কিয়ামতের এই আলামতটি একাধিক সময়ে প্রকাশিত হবে। উমার ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে তা প্রকাশিত হয়েছিল।
ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান বলেনঃ “উমার ইবনে আব্দুল আজিজের শাসনামলে লোকেরা প্রচুর সম্পদ নিয়ে আমাদের কাছে আগমন করত। তারা আমাদের বলতঃ তোমরা যেখানে প্রয়োজন মনে কর সেখানে এগুলো বিতরণ করে দাও। গ্রহণ করার লোক না পাওয়া যাওয়ায় তাদের কাছ থেকে কেউ মাল গ্রহণ করতে রাজী হতনা। পরিশেষে মাল ফেরত নিতে বাধ্য হত। মোটকথা তার শাসনামলে যাকাত নেয়ার মত লোক ছিলনা।”  (ফাতহুল বারী, ১৩/৮৩)
কিয়ামতের এই আলামতটি ইমাম মাহদীর আমলে পুনরায় প্রকাশিত হবে।
হেজাজ থেকে বিরাট একটি আগুন বের হবে
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) থেকে সহিহ হাদিস এ বর্ণিত হয়েছে যে,কিয়ামতের পূর্বে হেজাজের(আরব উপদ্বীপের) জমিন থেকে একটি বড় আগুন বের হবে। এই আগুনের আলোতে সিরিয়ার বুসরা নামক স্থানের উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হয়ে যাবে। নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “হেজাজের ভূমি থেকে একটি অগ্নি প্রকাশিত না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবেনা। উক্ত অগ্নির আলোতে বুসরায় অবস্থানরত উটের গলা পর্যন্ত আলোকিত হবে।”   (বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) এর ভবিষ্যৎবাণী সত্য হয়েছে। ইমাম নববী(রহমতুল্লাহি আলাইহি) বলেনঃ ৬৫৪ হিজরিতে আমাদের জামানায় উল্লেখিত ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। এটি ছিল বিরাট একটি অগ্নি। পবিত্র মদিনার পূর্ব দিক থেকে তা প্রকাশিত হয়েছিল। একমাস পর্যন্ত আগুনটি স্থায়ী ছিল।
সুদখোরের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে
মুসলমানের উপর সুদ আদান-প্রদান করা এবং সুদের ব্যবসা হারাম করা হয়েছে। আল্লাহ(সুবহানাহু ওয়া তা’আলা) বলেনঃ “হে ইমানদারগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ গ্রহণ করোনা এবং আল্লাহকে ভয় কর যাতে তোমরা সফলকাম হইতে পার।” (সূরা আল-ইমরান:১৩০)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) সুদখোরকে অভিশাপ করেছেন(বুখারী,অধ্যায়ঃ কিতাবুল ফিতান)।কিয়ামতের পূর্বে মুসলমানদের মাঝে সুদ গ্রহণ করা এবং সুদের ব্যবসা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আমার উম্মতের মধ্যে এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ কামাই করার ব্যাপারে হালাল-হারামের বিবেচনা করা হবেনা।(তাবারানী)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম) বলেনঃ “নিশ্চয় কিয়ামতের আলামতের মধ্যে থেকে অন্যতম আলামত হচ্ছে সুদের প্রসার লাভ করবে।”(বুখারী, অধ্যায়ঃ কিতাবুল বুয়ু)
নবী(সাল্লাল্লাহু আলাইহুয়া সাল্লাম)এর বাণী বাস্তবে পরিণত হয়েছে। অগণিত মুসলমান আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ অমান্য করে সুদের ব্যবশায় লিপ্ত হয়েছে। বর্তমানে এমন কোন ইসলামী দেশ পাওয়া যাবেনা যেখানে সুদী ব্যাংক নেই বা সুদের ব্যবসা নেই।

No comments:

Post a Comment