Friday 2 September 2016

দুনিয়াতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ(ইতিকাফ)

দুনিয়াতে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ

শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী | ২৫ জুন, ২০১৬  islam

ইতিকাফ একটি বিশেষ ইবাদত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন: ‘আর আমি ইবরাহিম (আ.) ও ইসমাইল (আ.)-এর কাছ থেকে এই অঙ্গীকার নিয়েছিলাম যে তাঁরা যেন আমার ঘরকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রাখেন। (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১২৫)। ইতিকাফের মাধ্যমে মানুষ দুনিয়ার সবকিছু ছেড়ে আক্ষরিক অর্থেই আল্লাহর সন্নিধানে চলে যায়। হজরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) হাদিসে কুদসিতে বলেছেন; আল্লাহ তাআলা বলেন, বান্দা যখন আমার দিকে হেঁটে আসে, আমি তখন তার দিকে দৌড়ে যাই। বান্দা যতক্ষণে আমার দিকে এক বিঘত অগ্রসর হয়, আমি ততক্ষণে তার দিকে এক হাত অগ্রসর হই। (বুখারি)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা বলেছেন, আমার বান্দা আমাকে যেভাবে মনে করে, আমি তার সঙ্গে সেইরূপ করি; যদি সে আমাকে নিজে নিজে স্মরণ করে আমিও নিজে তাকে স্মরণ করি; যদি সে মজলিশে আমার আলোচনা করে, আমি তার চেয়ে উত্তম মজলিশে তার আলোচনা করি। (বুখারি: ৬৯৭০)।

‘ইতিকাফ’ আরবি শব্দ। অর্থ হলো অবস্থান করা, আবদ্ধ করা বা আবদ্ধ রাখা। ইতিকাফ হলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে নিজেকে নির্দিষ্ট জায়গায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত আবদ্ধ রাখা। যিনি ইতিকাফ করেন, তাঁকে ‘মুতাকিফ’ বলে। রমজানের শেষ দশক তথা ২০ রমজানের দিন সূর্যাস্তের আগে থেকে ঈদের চাঁদ তথা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়া বা ৩০ রমজান পূর্ণ হয়ে ওই দিন সূর্যাস্ত পর্যন্ত (৯ দিন বা ১০ দিন) ইতিকাফ করা সন্নতে মুআক্কাদাহ কিফায়াহ। কোনো মসজিদ মহল্লায় কয়েকজন বা কোনো একজন আদায় করলে সবাই দায়মুক্ত হবে। আর কেউই আদায় না করলে সবাই দায়ী থাকবে। তবে আদায়ের ক্ষেত্রে যিনি বা যাঁরা আদায় করবেন, শুধু তিনি বা তাঁরাই সওয়াবের অধিকারী হবেন।
ইতিকাফকারীর বিশেষ সুবিধা হলো, যে রাতেই শবে কদর হোক না কেন, ইতিকাফকারী ইতিকাফরত থাকায় তা পেয়ে যাবেন এবং ওই রাতে তিনি ঘুমিয়ে থাকলেও শবে কদরের ইবাদতের সওয়াব পাবেন
১০ দিনের কম যেকোনো পরিমাণ সময় ইতিকাফ করলে তা নফল ইতিকাফ হিসেবে গণ্য হবে। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। ইতিকাফের অন্যতম উদ্দেশ্য হলো শবে কদর প্রাপ্তি; রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করলে শবে কদর প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়। ইতিকাফের মূল কথা হলো সবকিছু ছেড়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে যাওয়া। পুরুষদের মসজিদে ইতিকাফ করতে হয়; নারীরা নির্দিষ্ট ঘরে বা নির্ধারিত কক্ষে ইতিকাফ করবেন। নফল ইতিকাফও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল; তাই সম্পূর্ণ সুন্নত ইতিকাফ পালন করতে না পারলে যত দূর সম্ভব নফল ইতিকাফ করাও গুরুত্বপূর্ণ। নফল ইতিকাফ বছরের যেকোনো সময়ই করা যায়। ইতিকাফের জন্য রোজা শর্ত; কিন্তু স্বল্প সময় (এক দিনের কম সময়) ইতিকাফ করলে তার জন্য রোজা রাখা শর্ত নয়। নফল ইতিকাফ মানত করলে বা আরম্ভ করে ছেড়ে দিলে, তা পূর্ণ করা ওয়াজিব। এর জন্য রোজা শর্ত এবং এটি এক দিন (২৪ ঘণ্টা) এর কমে হবে না।
নারীদের ইতিকাফ
নারীরা নিজ ঘরে বা নির্দিষ্ট কক্ষে ইতিকাফ করবেন। প্রাকৃতিক প্রয়োজন ও একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ওই ঘর বা কক্ষ থেকে বের হবেন না। অজু ইসতিনজা বা পাক-পবিত্রতার জন্য বাইরে বের হলে কারও সঙ্গে কথাবার্তা বলবেন না। তবে দরকার হলে ওই কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের কাউকে ডাকতে পারবেন এবং কেউ ভেতরে এলে তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারবেন। ইতিকাফ কক্ষে এমন কেউও অবস্থান করতে পারবেন, যাঁরা ইতিকাফ করছেন না। ইতিকাফ কক্ষটি যদি শয়নকক্ষ হয় এবং একই কক্ষে বা একই বিছানায় অন্য যে কেউ অবস্থান করেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই; এমনকি স্বামীও পাশে থাকতে পারবেন, তবে স্বামী-স্ত্রী সুলভ আচরণ ইতিকাফ অবস্থায় নিষিদ্ধ; এর দ্বারা ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। ইতিকাফের সময় ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। (মাজমুআ ফাতাওয়া ও ফাতাওয়া হিন্দিয়া)।
ইতিকাফের বিশেষ সুবিধা
ইতিকাফকারীর বিশেষ সুবিধা হলো, যে রাতেই শবে কদর হোক না কেন, ইতিকাফকারী ইতিকাফরত থাকায় তা পেয়ে যাবেন এবং ওই রাতে তিনি ঘুমিয়ে থাকলেও শবে কদরের ইবাদতের সওয়াব পাবেন। কারণ, ইতিকাফই একটি ইবাদত। (খোলাসা)।
ইতিকাফকারী মসজিদের ভেতরে যা যা করতে পারবেন এবং পারবেন না
ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী ফরজ ইবাদতের বাইরে কোনো নফল ইবাদত না করলেও ইতিকাফের সওয়াব পাবেন। তবে অতিরিক্ত নফল ইবাদত করলে আরও বেশি ফজিলতের অধিকারী হবেন। যেমন: কোরআন শরিফ তিলাওয়াত করা, নফল নামাজ পড়া, কাজা নামাজ আদায় করা, দোয়া-দরুদ পাঠ করা, জিকির-আজকার করা, তাসবিহ-তাহলিল পাঠ করা। এ ছাড়া দ্বীনি কথাবার্তা ও ধর্মীয় জ্ঞানচর্চা করাও সওয়াবের কাজ। যেমন: কোরআন, হাদিস, ফিকাহ, তফসির ইত্যাদি পাঠ করা ও তালিম করা। ইতিকাফ অবস্থায় এমন সব কথা বলা ও কাজ করা বৈধ, যাতে কোনো গুনাহ নেই। প্রয়োজনীয় সাংসারিক কথাবার্তা বলতেও নিষেধ নেই; তবে অহেতুক অযথা বেহুদা কথাবার্তা দ্বারা ইবাদতের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ইতিকাফকারী মসজিদের মধ্যে ইতিকাফরত অবস্থায় সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারবেন এবং মাথায়, দাড়িতে ও চুলে তেল লাগাতে পারবেন। মাথার চুল ও দাড়ি চিরুনি দিয়ে আঁচড়াতে পারবেন। (আল বাদায়ে ওয়াস সানায়ে)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

No comments:

Post a Comment